স্বদেশ ডেস্ক
দ্বিপক্ষীয় আলোচনা, পশ্চিমা নানা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইউক্রেনে চলমান রাশিয়ার হামলা ও যুদ্ধ বন্ধে কোনো অগ্রগতি নেই। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার তুরস্কের আনাতালিয়ায় আলোচনায় বসেছিলেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লেভরভ ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা। বিবিসি, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান, আল জাজিরার মতো আন্তার্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, এই আলোচনায় উভয় পক্ষ ইউক্রেনে সৃষ্ট মানবিক সংকটগুলো সমাধানে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হলেও যুদ্ধ বন্ধে কোনো অগ্রগতি হয়নি। বৈঠকের পর ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুলেবা বলেছেন, ‘রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেসব দাবি তুলে ধরেছেন সেগুলো মানা হলে সেটি হবে তাদের কাছে আত্মসমর্পণের সামিল; কিন্তু আমরা আত্মসমর্পণ করব না। তার পরও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ ও বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ লাঘব এবং রুশ দখলদার বাহিনীর হাত থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল স্বাধীন করার প্রয়াসে এই আলোচনা চালিয়ে যেতে আমি প্রস্তুত।’ এ সময় কুলেবা একের পর এক হামলায় বিপর্যস্ত ইউক্রেনীয় শহর মারিওপোলে মানবিক করিডর স্থাপন এবং চব্বিশ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকরে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লেভরভ বলেছেন, ‘ইউক্রেনে তার দেশের সামরিক অভিযান পরিকল্পনা অনুসারেই অগ্রসর হচ্ছে। সংকট সমাধানের ব্যাপারে তার দেশ সিরিয়াস আলোচনা চায়। তবে ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলো যে আচরণ
করছে তা পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জক করবে।’ তবে ২৪ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। লেভরভ তার বক্তব্যে আরও দাবি করেন, জীবাণু অস্ত্র তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ব্যবহার করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের অভিযোগ উদ্ভট বলে উল্লেখ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, রাশিয়া ইউক্রেনে জীবাণু অস্ত্রের হামলা চালাতে পারে।
যুদ্ধ বন্ধে আলোচনায় অগ্রগতি না হলেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন শিগগির আলোচনায় বসবেন বলে বিশ্বাস ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির। মার্কিন একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমরা যে শক্তিশালী, পুতিন তা দেখতে পাচ্ছেন। আমাদের আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন। আলোচনাই এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার একমাত্র উপায়। তাই আমি পুতিনকে বলবো, এখনই যুদ্ধ থামান, আলোচনায় আসুন।’ অপর এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি গত বুধবার মারিওপোলে একটি ম্যাটারনিটি ও শিশু হাসপাতালে রুশ বিমান হামলার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি একে যুদ্ধাপরাধ হিসেবেও আখ্যায়িত করেন।
আলোচনার মধ্যেও ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রুশ হামলা অব্যাহত আছে। গতকাল সকাল থেকেই রাজধানী কিয়েভে থেমে থেমে বেজে উঠছে বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন। দফায় দফায় বিমান হামলায় বিপর্যস্ত মারিওপোলেও অব্যাহত আছে আক্রমণ। ক্রেমলিনে রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনে রুশ সেনাদের লক্ষ্য বেসামরিক স্থাপনা বা মানুষ নয়; কিন্তু বেসামরিক কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি আমাদের সেনাদের হামলা করে, সেক্ষেত্রে তাদের নির্বিচার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হবে।
জাতিসংঘ বলছে, গত ১৫ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেন ছেড়ে অন্তত ২৩ লাখ মানুষ আশপাশের দেশগুলোতে পালিয়ে গেছে। ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মারিওপোলসহ সাতটি শহর রুশ সৈন্যরা ঘেরাও করে রেখেছে। এসব শহর থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নিতে মানবিক করিডর খোলা হচ্ছে।
এদিকে ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে যৌথভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে চীন ও ইতালি। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে এক বৈঠক শেষে গতকাল ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইগি ডি মাইও এই ঘোষণা দেন।